রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১০ পূর্বাহ্ন
রাজিব আলী,রাজশাহী: অপকম ও বগুড়ায় ফাঁসির আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাসহ বিস্তর অভিযোগ থাকার পরও গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন রাজশাহী কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি (প্রিজন্স) কামাল হোসেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও। এছাড়া আছে দায়িত্বে অবহেলায় বন্দি পলায়ন, টাকার বিনিময়ে কারারক্ষিদের বদলি, প্রকাশ্যে ঘুস গ্রহনের অভিযোগ জমা দিয়েছেন কারারক্ষি মনিরুজ্জামান। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেই অধিদপ্তর তদন্ত করছে না বলে জানান এই ভোক্তভোগি কারারক্ষি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব সিকিউকে মোসতাক আহমদ প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, কারও বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অভিযোগ উঠলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া। ওই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত বা ওএসডি অবস্থায় রেখে অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত না করেন তাহলে ওই কর্মকর্তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। তবে বিষয়টি নৈতিকভাবে ঠিক নয়। কারাদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজশাহী কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি (প্রিজন্স) কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ডাকযোগে অভিযোগ এসেছে, সেগুলো নিয়ে তদন্ত চলছে।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কারা অধিদপ্তরের অধীনে সারা দেশে ৬৮টি কারাগার আছে। সে অনুযায়ী উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা খুবই কম। তাই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই যদি তাকে কাজ থেকে বিরত রাখা হয়, তাহলে কাজ করার লোকই পাওয়া যাবে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী কারাগারের যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের একজন হলেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন্স) কামাল হোসেন, সাবেক জেল সুপার আব্দুল জলিল ও সাবেক জেলার নিজাম উদ্দিন। ডিআইজি (প্রিজন্স) কামাল হোসেন চট্্রগ্রাম কেন্দ্রীয় কাগারারের সিনিয়র জেল সুপার হিসাবে দায়িত্বে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। জানাগেছে, চট্টগ্রামের লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে জঙ্গি ও কারাবন্দি বিএনপি নেতাকর্মীদের অবৈধ সুবিধা দেন কামাল হোসেন। আরও অভিযোগ ছিল, কারাগারে জেলকোড অনুযায়ী বন্দিদের মানসম্পন্ন খাবার দেওয়া হতো না। সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে নিম্মমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। কারাগারের ভেতর মাদক সরবরাহের সুযোগ করে দিতেন কামাল হোসেন। আদালতে হাজিরা থাকলে জেলকোড অনুযায়ী বন্দিদের দুপুরের খাবার বাবদ টাকা দেওয়ার বিধান থাকলেও কামাল হোসেনের নির্দেশে তা দেওয়া হচ্ছিল না। আমি এর প্রতিবাদ করার পর থেকে জনপ্রতি ২৬ টাকা করে দেওয়া হয়। সাধারণ বন্দিদের চেয়ে চিহ্নিত অপরাধীদের মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ দেন বেশি। কারা অভ্যন্তরে প্রতিবাদ করায় আমি কামাল হোসেনের রোষানলের শিকার হয়েছি। ডিআইজি কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে আনা নানা অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কারা মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। এছাড়া কামাল হোসেনকে প্রত্যাহার করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে কারা মহাপরিদর্শককে চিঠি দেওয়া হয়।
কিন্তু এখনো তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এদিকে অভিযোগ তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় কামাল হোসেনকে ২০২০ সালের অক্টোবরে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি (প্রিজন্স) হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, দুদক আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে কিছুই পাইনি। কয়েকটি অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে এবং আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করুন। এর আগে বহুবার তদন্ত হয়েছে। কারারক্ষি মনিরুল মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। কারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব জিয়াউল হক প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, কারাগারগুলোতে নজরদারির কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়। এই সুযোগে অনেক অভিযোগ উঠেছে। শিগগিরই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কারাগারগুলোতে সরেজমিন ভিজিট শুরু হবে। কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে সাবেক ডিআইজি (প্রিজন্স) মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, যার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে তিনি যদি পদস্থ কর্মকর্তা হন, আর তার কারণে যদি তদন্তে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে তবে তাকে দায়িত্বে না রাখাই ভালো। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থেই এটা করা উচিত। তিনি আরও বলেন, ডিআইজি, জেল সুপার এবং জেলার কারা অধিদপ্তরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ। দায়িত্বে রেখে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত হলে তদন্ত প্রভাবিত করার আশঙ্কা থেকেই যায়।